বিশ্বের ধুলোকণায় যে আশ্চর্য জিনিস মিশে রয়েছে

Posted on

  কবি বলেছেন, মধুময় পৃথিবীর ধূলি। কিন্তু যদি জানা যায়, এই ধূলি শুধু মধুময়ই নয়, তা যুগযুগান্তের অন্যতম রহস্যও বহন করছে, তখন রোমাঞ্চ হওয়া স্বাভাবিক। এ বিশ্বের ধুলোয় রয়েছে ৭০০ কোটি বছরের পুরনো কণার স্পর্শ!

১৯৬৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর, স্থানীয় সময় সকাল ১১টা। অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া প্রদেশের মার্চিসন গ্রামের কাছে আকাশ থেকে উজ্জ্বল অগ্নিগোলকের রূপে ভূপৃষ্ঠে এসে পড়েছিল বৃহৎ এক উল্কাপিণ্ড। ১৩ বর্গকিমিরও বেশি এলাকা জুড়ে ছোটো-বড়ো খণ্ডে ছড়িয়ে পড়েছিল উল্কাপিণ্ডটি। টুকরোগুলি সংগ্রহ করে উল্কাপিণ্ডের ওজন দাঁড়িয়েছিল ১০০ কেজিরও বেশি। এই উল্কাই ‘মার্চিসন উল্কা’

 নামে পরিচিত।কনড্রাইট-জাতীয় এই উল্কাপিণ্ডতেই রয়েছে পৃথিবীর বুকে খুঁজে পাওয়া এখনও পর্যন্ত সব চেয়ে পুরনো পদার্থ। মার্চিসন উল্কায় রয়েছে সিলিকন কার্বাইড, যা এখনও পর্যন্ত পৃথিবীতে প্রাপ্ত সবচেয়ে পুরনো পদার্থ। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মহাজগৎ নিয়ে গবেষণাকারীরা জানান, মার্চিসন উল্কায় যে সিলিকন কার্বাইড রয়েছে, তার বয়স ৭ বিলিয়ন অর্থাৎ ৭০০ কোটি বছর! তার মানে, এই পদার্থের বয়স পৃথিবীর বয়সের (৪৫৪ কোটি বছর) থেকেও প্রায় ২৫০ কোটি বছর বেশি! এমনকি আমাদের সৌরজগতের বয়সের (৪৬০ কোটি বছর) চেয়েও এই পদার্থ অনেক অনেক পুরনো!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস্-এর জার্নালে এ নিয়ে গবেষণাও প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, পৃথিবী এবং সৌরজগতের চেয়েও প্রাচীন এই পদার্থ আসলে আন্তর্নাক্ষত্রিক ধূলিকণা, যা মৃতপ্রায় নক্ষত্ররা অন্তিমে ব্রহ্মান্ডে উগরে দেওয়া প্রাক্-সৌর কণা দ্বারা তৈরি। কোনো গ্রহাণুর পিঠে চেপেই এ ধরনের আন্তর্নাক্ষত্রিক ধূলিকণা ভূপৃষ্ঠে নেমেছে। 

ব্রহ্মান্ডে এ ধরনের ভাসমান আন্তর্নাক্ষত্রিক ধূলিকণা যথেষ্ট উপস্থিতি থাকলেও, পৃথিবীর বুকে এর আগে কোনো প্রাক্-সৌর কণা খুঁজে পাওয়া যায়নি। কারণ পৃথিবী গঠনের সময়ে সংগৃহীত এধরনের প্রাক্-সৌর কণাগুলি নানা প্রক্রিয়ার জেরে উত্তপ্ত ও পরিবর্তিত হয়ে গেছে। সাধারণত অধিকাংশ প্রাক্-সৌর কণার দৈর্ঘ্য হয় ১ মাইক্রন বা তারও কম। তবে মার্চিসন উল্কাপিণ্ডে প্রাপ্ত প্রাক্-সৌর কণাদের দৈর্ঘ্য ২-৩০ মাইক্রন।